Post by relatedRelated post
১৩ই মে, ২০১৬-তে মুক্তি পেয়েছে সায়েম জাফর ইমামী পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র রুদ্র। সিনেমাটি নিয়ে লিখেছেন স্নিগ্ধ রহমান।
এবিএম সুমনের সিনেমাতে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত ছিল দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য একটি বড় সুসংবাদ। বেশ কিছু কারণে একে সুসংবাদ বলছি। দেশে অভিনেতা সঙ্কট আছে। আর তারকা সঙ্কট তো আরো তুঙ্গে। ম্যাসকুলার অ্যাক্টরের কথা তো বাদই দিলাম। পুরো পৃথিবী জুড়ে অ্যাক্টররা এখন ক্যারিয়ার শুরুই করছে সিক্স প্যাক নিয়ে। অথচ আমাদের এখানে অ্যাভারেজ ফিটনেস ধরে রাখতেই সবাই খাবি খাচ্ছে। “কুল” জেনারেশনের কেউ হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখে না (যদিনা অনন্ত জলিল টাইপ সিনেমা হয়। যেটা নিয়ে ফেসবুকে লিখে এন্তার লাইক কামানোর সুযোগ থাকে)। এই জেনারেশনের চোখে যারা হার্টথ্রব, তারাও সাধারণত সিনেমায় “নামতে” চান না। আর সিনেমা করলেও সেটা হয়, আর্ট (অথবা সেমি-আর্ট ধাঁচের) ফিল্ম।
সুমন কিন্তু এই সব কয়টা প্রথা ভেঙেছেন। তার প্রথম সিনেমা ছিল অচেনা হৃদয়। ভালো-খারাপের প্রসঙ্গে পরে যাই। আমাদের দেশে মৌলিক গল্প এখন কেউ অ্যাটেম্পই করে না। বেশিরভাগই ভারতের দক্ষিণী সিনেমার নকল/রিমেক অথবা চেনা গল্পের রিটেলিং। অচেনা হৃদয় খুব ভিন্ন একটা গল্প আর খুব ভিন্ন একটা ফিনিশিং টেনেছিলো। মুভিটা ভালো লাগলেও, মনে হয়েছে পরিচালক সুমনকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। সেই মুভিতে সুমন ছাড়াও অন্য নায়ক (ইমন) ছিলেন, প্রসূনের ক্যারেক্টারটাও বেশ স্ট্রং ছিল। কিন্তু রুদ্র ছিল সুমনের সলো মুভি। পিয়া থাকলেও পুরো সিনেমার কেন্দ্রবিন্দু হলেন সুমন। এই ছবিটাও দেখার পরেও অত্যন্ত বেদনার সাথে বলতে হচ্ছে, পরিচালক সুমনকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি।
রুদ্র (সুমন) গান গাইতে ভালোবাসে। স্বপ্ন দেখে রকস্টার হবার। কিন্তু ছবি কিছুদূর যাবার পর দেখা যায়, রুদ্র গিটারের বদলে বন্দুক হাতে নিয়ে ঘুরছে। রুদ্রকে ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে পুলিশ অফিসার শতাব্দী ওয়াদুদ। একসময় পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে রুদ্র সিলেটে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে পরিচয় হয় পিয়ার (পিয়া বিপাশা) সাথে। পিয়া দেখতে অবিকল রুদ্রের আগের বান্ধবী অদৃতার মতো। রুদ্র পিয়াকে এড়াতেও পারে না, তার কাছেও যেতে পারে না। অদৃতা কোথায়? আর রুদ্রও বা কিভাবে রকস্টার হবার বদলে হয়ে গেল গ্যাংস্টার? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় গল্প আগালে।
সোজা ভাষায় এই ছিল রুদ্র-দ্য স্টোরি অফ আ গ্যাংস্টার সিনেমার গল্প। গল্পটা মৌলিক হলেও নতুন কিছু নয়। প্রেমে পড়ে গ্যাংস্টারের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার বাসনা এবং এতে তার গডফাদারের আপত্তি নিয়ে অনেক মুভি আছে। এমনকি সুমনের অচেনা হৃদয় সিনেমাতেও এই বিষয়টি ছিল। বাকি সাবপ্লটও চেনা। কাহিনী, চিত্রনাট্য, চিত্রগ্রহণ, পরিচালনা সব সায়েম জাফর ইমামী একাই সামলেছেন। আরো কয়েকজন নতুন পরিচালককে দেখলাম তাই করতে। কেন তারা এমনটা করছেন! বাজেট সীমাবদ্ধতা নাকি মাইক্রোম্যানেজ করার প্রবণতা এর মূল কারণ? এখন প্রথমবারেই যে একজন তার সব ভূমিকায় সফল হবেন, সেটা কেউই আশা করে না। কিন্তু তাদের শিক্ষানবিশ অবস্থার নভিস আউটপুটের শিকার হতে হয় দর্শকদের। ক্লাইম্যাক্সের প্রায় পুরোটাই ছিল দুর্বল ভিএফএক্সের অন্তহীন প্রদর্শনী। একটা সিনেমার সব কিছুই যদি মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ের প্যাথেটিক হয়, তখন সেটা পরিণত হয় প্রতারণায়। কারণ একজন দর্শক কিন্তু টিকেট কেটে সিনেমাটি দেখছে। সুতরাং, বাজেট সীমাবদ্ধতার অজুহাত কিন্তু দর্শক কানে তুলবে। কারণ তার কাছ থেকে তো টিকেটের দাম কম রাখা হয়নি। আর এটা নতুন শিল্পীদের জন্য এটা আরো ক্ষতিকারক। আমি যেদিন সিনেমাটি দেখছিলাম (শনিবার), মধুমিতায় আমার সামনে তিনজন নারী দর্শক ছিলেন। তারা সুমনের ফ্যান বলেই মনে হলো (কারণ সুমন আসামাত্র তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন)। প্রসূন, মৌসুমী হামিদ, সুমন, পিয়া এদের সিনেমায় অভিনয় করাটা চলচ্চিত্রের জন্য অনেক পজেটিভ বিষয়। কারণ যারা এদের ফ্যান, তারা কিন্তু সচরাচর সিনেমা হলে আসে না। এখন যারা সুমন বা পিয়া বিপাশার কারণে ছবিটা দেখতে এসেছিলেন; তারা একটা বাজে ছবি দেখে প্রতারিত হলেন, তাদের বিশ্বাস ভেঙে গেল। এরা কিন্তু আগামীতে আরেকটা সিনেমা দেখার আগে দশবার দ্বিধায় ভুগবে। তাদের অবিশ্বাসের মাশুল দিতে হয় পরবর্তীতে মুক্তি পাওয়া একটি ভালো ছবিকে।
সিনেমায় দেখার মতো ছিল আলাকজান্ডার বো’র অভিনয় আর ক্ষেত্রবিশেষে শতাব্দী ওয়াদুদের অভিনয়। ফাইটিং সিকোয়েন্সে সুমনের কাজ ভালো ছিল।
পুরো সিনেমায় চিকন আলীর ক্যারেক্টারের তাৎপর্য বোঝা গেল না। গল্পের অন্য কোন চরিত্রের সাথে তার কোন প্রকার সংযোগ ছিল না। এই সিনেমায় তার অবস্থান বুঝতে যখন খাবি খাচ্ছি, এমন সময় চিকন আলীর গাওয়া একটা গানও শুরু হয়ে গেল। সেই গান আবার R… Rajkumar সিনেমার Saree Ke Fall Sa গানের বাংলা ভার্শন। তাও ভাগ্য ভালো এই গান এক অন্তরার বেশি শুনতে হয়নি। এই সিনেমার একটা মন আর তবু তুমি গান দুটো ভালো লেগেছে। আইটেম সংটাও মন্দ ছিল না। তবে আইটেম গার্ল মিতু এতটাই আড়ষ্ট ছিল যে, তাকে দেখে মনে হলো তার নড়তেও কষ্ট হচ্ছে। অন্তত দুটো গান কোন রকম কারণ ছাড়াই দুম করে শুরু হয়ে গেল। রুদ্রর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন নাফিস আর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছেন ইতালিয়ান কম্পোজার এনিও মরিকোনে। কিন্তু মরিকোনে নতুন কোন স্কোর কম্পোজ না করে গুড, ব্যাড, আগলির থিমটাই দিয়েছেন আর পরিচালকই পুরোটা সময় জুড়ে এটাই ব্যবহার করেছেন।
ইউটার্ন, মুসাফির তার পর রুদ্র- তিনটি মুভির মাঝে অদ্ভুত এক মিল আছে। প্রতিটাই অ্যাকশনধর্মী সিনেমা। তবে, আমি অন্য এক মিলের কথা বলছি। আরেকটি মিল হলো, তিনজনেই মুভির শেষে সিক্যুয়েলের আগমনী বার্তা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এসবের কি আদৌ দরকার আছে? বর্তমান ছবিটির দর্শক-গ্রহণযোগ্যতা বিচারের পরেই, এমন ঘোষণা আসা উচিৎ। সায়েম জাফর ইমামী’র জন্য একটাই আশার বার্তা থাকতে পারে। বাংলাদেশের অ্যাকশন ঘরানার দুই সাম্প্রতিক সংযোজন ইফতেখার চৌধুরী আর আশিকুর রহমানের প্রথম কাজগুলো বেশ বাজে হলেও, তারা কিন্তু হতাশ হননি বা মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেননি। ক্রমাগত নিজেদের ইমপ্রুভ করেছেন। সায়েম সাহেব এদের দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারেন। হয়তো তিনি একদিন এদের চেয়েও ভালো সিনেমা বানাবেন। সেই শুভকামনাই থাকল।
POST YOUR COMMENTS